Facebook

test

Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১ অক্টোবর, ২০২১

জারবেরা চাষের জন্য কি করা প্রয়োজন


  জারবেরা ফুল চাষ করার জন্য সকল প্রকার তথ্য নিচে উল্লেখ করা হলো



 জারবেরা চাষের পদ্ধতি


প্রথমে ফুল পরিচিতি

সুধু বাংলাদেশ নয় জারবেরা এ্যাসটারেসী পরিবারভুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বানিজ্যিক ফুল । এটি জার্র্মান পরিবেশবিদ ট্রগোট জার্বার এর নামানুসারে  ফুলটির
নামকরন করা হয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক ফুল বানিজ্যে কাট ফ্লাওয়ার (Cut flower) হিসেবে উল্লেখযোগ্য ১০টি ফুলের মধ্যে অন্যতম কাট ফ্লাওয়ারের জন্য ও বেশী দিন ফুলদানীতে সতেজ রাখতে জারবেরার কনেও তুলনা হয় না।

ফুলের জাত ও প্রকারভেদ

জারবেরা ফুলের জাত ও প্রকারভেদে মধ্যে প্রায় ৪০টির বেশি  প্রজাতি দেখা যাই। এ গুলির মধ্যে জারবেরা জ্যামেসোনি প্রজাতিটি চাষাবাদ হচেছ সংকরায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে এর অনেক জাত উদ্ভাবিত করেছে । বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট  জারবেরা  ফুলের বারি জারবেরা-১ ও বারি জারবেরা-২ দুইটি জাত উদ্ভাবন করেছেন। 

 

আবহাওয়া ও জলবায়ু

জলবায়ু জারবেরা কষ্টসহিষ্ণু গাছ এবং সব ধরনের জলবায়ুতে কমবেশী জন্মায়। গ্রীষ্মমন্ডলীয় (Temperate)  অঞ্চলে উন্মুক্ত স্থানে পলিসেডে এবং নাতিশীতোষ্ণ (Tropical) অঞ্চলে এ ফুলটিকে গ্রীনহাউজে চাষাবাদ করার পরামর্শ দেয়া হয়।

 

নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ 

বাংলাদেশে জারবেরা শীতকালীন সময়ে খোলা মাঠে বা উন্মুক্ত স্থানে চাষ করা হয়ে থাকে। গ্রীষ্মকালীন সময়ে পলিসেডে চাষ করা হয়। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষাবাদ করলে যদিও খরচের প্রধান্য অধিক পড়ে তথাপিও ফুলের গুনগতমান ও ফলন বৃদ্ধি এবং রোগপোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে জারবেরা চাষ করা জরুরী প্রয়োজন। উজ্জ্বল সূর্যালোক জারবেরা গাছের বৃদ্ধি ও গুনগতমান সম্পন্ন ফুল উৎপাদনে অনেক সহায়ক। কিন্তু গ্রীষ্মকালে উন্নত ফুল উৎপাদনের জন্য হালকা ছায়া (৩০%) প্রদান করতে হয়। জারবেরা চাষে অনুকূল দিবাকালীন তাপমাত্রা ১৬-২০০ সেন্টিগ্রেড এবং রাত্রিকালীন তাপমাত্রা ১০ - ১২০ সেন্টিগ্রেড । উচচ তাপমাত্রায়  গাছে ফুল আসে ঠিকই,  কিন্তু ফুল ততটা গুনগত মান সম্পন্ন হয় না

 

 জারবেরা চাষের জন্য উপযুক্ত মাটিঃ

সুনিষ্কাশিত, উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি  জারবেরা চাষের জন্য উত্তম। মাটির পি এইচ মান ৫.৫-৭.০ এর মধ্যে থাকা দরকার। জারবেরার জমিতে প্রচুর জৈব সার থাকা দরকার এজন্য পরিমিত পরিমানে গোবর সার, পাতাপচা সার ইত্যাদি প্রয়োগ করতে হয়।

 

 জারবেরা ফুলের বংশবৃদ্ধির মাধ্যম

(ক) বীজের মাধ্যমে  
বীজের মাধ্যমে জারবেরার বংশবৃদ্ধি করা হয়। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের সকল গুনাবলী বজায় থাকে না, তবে পদ্ধতিটি অতি সহজ। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো  বীজের মাধ্যমে রোগ-পোকা আক্রমনের সম্ভাবনা কম থাকে ।

 

(খ) ডিভিশন  

মাতৃগাছের ক্লাম্প বাছাই করে বংশবৃদ্ধি করা যায়। এজন্য মাঠের সুপ্রতিষ্ঠিত ও পরিপূর্ণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত গাছগুলিকে ছোট ছোট ভাগে ধারালো ছুরি দিয়ে ভাগ করা হয়।

উক্ত সাকার (Sucker) গুলির পাতা ও শিকড় হালকা প্রুনিং করে পরবর্তীতে নতুন বেডে  লাগানো হয়।

 

(গ) মাইক্রোপ্রোপাগেশন 

বানিজ্যিক ভাবে চাষাবাদের ক্ষেত্রে উপরের পদ্ধতি দুটি খুব উপযোগী নয়। অল্প সময়ে প্রচুর সংখ্যায় রোগমুক্ত জারবেরার চারা পাওয়ার জন্য টিসুকালচার পদ্ধতিটি উত্তম। এ জন্য প্রথমে সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে। পরে ঐ গাছের কান্ডের বর্ধিত অগ্রাংশ, ফুল কুড়ি, পাতা  ইত্যাদিকে এক্সপ্লান্ট  হিসাবে নিয়ে বার বার সাব-কালচার  করে অসংখ্য চারা উৎপাদন করা সম্ভব হয়ে থাকে।

 

 জারবেরা ফুলের চাষ পদ্ধতি 

(ক) জমি তৈরী  
মাঝেমাঝে পরিমানমত জৈব সার দিতে হবে। তারপর ৪০-৪৫ সেঃ মিঃ গভীর করে আড়াআড়ি ও লম্বা ভাবে পরপর কয়েকটি চাষ দিয়ে জমিটি ঝুরঝুরা করে তৈরী করতে হবে। ফলে সকল জৈব সার মাটির সাথে সুন্দরভাবে মিশে যাবে

 

(খ) বেড তৈরী  

 জারবেরার জন্য বেডের উচ্চতা ২০ সেঃ মিঃ এবং প্রশস্ততা ১.০-১.২ মিঃ হলে ভাল হয়। জমিতে যেন পানি জমে না থাকে সেজন্য দুই বেডের মধ্যবর্তী ৫০ সেঃ মিঃ পানি নিষ্কাশন নালা থাকতে হয়। সাধারনতঃ একবার লাগিয়ে পর্যায়ক্রমে ২ বৎসর ফুল আহরন করা হয় বলে জমি ও বেড তৈরীর সময়   সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

 

(গ) চারা লাগানো  

বেড  তৈরী হলে জাত ও এর বৃদ্ধির ধরন বুঝে সাকারগুলি সারি থেকে সারি ৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ৪০ সেমি দূরত্ব রেখে রোপন করতে হয়। চারাগুলি এমনভাবে মাটিতে রোপন করতে হবে যেন চারার ক্রাউন মাটির উপরে থাকে । ক্রাউন মাটির নীচে গেলে গোড়া পচা রোগ সংক্রমনের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যায়।

 

(ঘ) লাগানোর সময়  

জারবেরা সারা বৎসর লাগানো যায় তবে উন্নত ফুল ও বেশী উৎপাদন পেতে সাধারনতঃ অক্টোবর-নভেম্বর  মাসে চারা লাগানো উচিত।

 

(ঙ) পানি দেয়া  

জারবেরার শিকড় গভীরে প্রবেশ করে বিধায় বার বার হালকা স্প্রিংকলার সেচের পরিবর্তে প্লাবন সেচ  দেয়া উত্তম। পানি সেচের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি না হয়। কারণ জারবেরা ক্ষেতে জলাবদ্ধতা মাটিবাহিত রোগ সংক্রমণ  করে। আবার মাটিতে পানির অভাব হলে গাছ ঢলে পড়ে, সেক্ষেত্রে ফুলের পুষ্পদন্ড ছোট হয়ে যায়। বায়ু চলাচলের সুবিধার জন্য প্রতিবার সেচ দেয়ার পর মাটিতে জো  আসলে নিড়ানী দিয়ে উপরের শক্ত আস্তরণ ভেঙ্গে দিতে হবে।

 

(চ) সারপ্রয়োগ 

জারবেরা দ্রুত বর্ধনশীল একটি ফুল ফসল।

গাছের বৃদ্ধি নিশ্চিতকরণ ও গাছ থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পরিমিত পরিমান সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর নতুন শিকড় গজানো শুরু হলে সুষম সার প্রয়োগ করা দরকার।

প্রতি হেক্টরে ১০ টন পঁচা গোবর/কম্পোস্ট, ২ টন কোকোডাষ্ট, ৩৫০ কেজি ইউরিয়া, ২৫০ কেজি টিএসপি ও ৩০০ কেজি মিউরেট অব পটাশ, ১৬৫ কেজি জিপসাম, ১২ কেজি বোরিক এসিড ও জিংক অক্সাইড সার প্রয়োগ করতে হবে। সাকার রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে পঁচা গোবর/কম্পোস্ট এবং ইউরিয়া বাদে অন্যান্য সার ৭-১০ দিন পূর্বে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। সাকার রোপণের ২৫ দিন পর ইউরিয়া সারের অর্ধেক প্রয়োগ করতে হবে এবং বাকি অর্ধেক সার সাকার রোপণের ৪৫ দিন পর গাছের গোড়ার চারপাশে একটু দূর দিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। উপরি প্রয়োগের পর সেচ দিতে  হবে।

 

রোগ ও পোকা মাকড় ব্যবস্থাপনাঃ

 

মুল পচা রোগঃ

মাটি বাহিত এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত হলে  গাছের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়এবং অবশেষে সম্পূর্ণ গাছটি শুকিয়ে যায়। মাটি জীবাণুমুক্ত করে চারা লাগালে এরোগ কম হয়।

 

গোড়া পঁচা রোগঃ

এটি মাটি বাহিত রোগ। এ রোগের ফলে গাছের কেন্দ্রীয় অংশ প্রথমে কালো রং ধারণ করে ও পরে পচে যায়। পরবর্তীতে পাতা ও ফুল মারা যায়।

 

প্রতিকারঃ

১. রিডোমিল অথবা ডায়থেন এম-৪৫ ছত্রাকনাশক ০.২% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

২. টপসিন ০.০৫% হারে ৭-১০ দিন অন্তর স্প্রে করেও এরোগ দমন করা যায়।

 

পাউডারি মিলডিউঃ

দুই ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এরোগ হয়। এরোগে আক্রান্ত গাছেরর উপরে  সাদা পাউডারের আস্তরণ দেয়া হয়েছে বলে মনে হয়।

প্রতিকারঃ

১। বেনোমিল ৫০ডব্লিউপি  ০.০১% হারে সেপ্র করলে ভাল ফল পাওয়া  যায়।

 

পোকামাকড় দমন পদ্ধতি

মাকড়ঃ

অনেক সময় শুস্ক ও উষ্ণ আবহাওয়ায় মাকড়ের আক্রমণ দেখা যায়। এর আক্রমণে পাতা ও ফুলকুঁড়ির বৃদ্ধি চরমভাবে বাধাগ্রস্ত হয়। ফুলের অস্বাভাবিক আকার ও আকৃতির কারণে বাজার মুল্য থাকেনা।

 

প্রতিকারঃ 

১. আক্রমনের প্রথম দিকে আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

২. যে কোন মাকড় নাশক যেমন ভারটিম্যাক বা ওমাইট ৫৭ইসি ১.৫ মিঃলিঃ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে

 হবে।

 

সাদা মাছি পোকা 

সাদা মাছি গাছের বিভিন্ন অংশের রস চুষে মারাত্মক ক্ষতি করে ফেলে । এ পোকা ভাইরাস রোগ ছড়ায়।

 

দমনঃ

১. আঁঠালো হলুদ রংয়ের ফাঁদ ব্যবহার করা ।

২.  ৫০ গ্রাম আধা ভাঙা নিমবীজ ১ লিটার পানিতে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে উক্ত পানি ছেকে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার পাতার নীচের দিকে স্প্রে করা।

৩.  চারা রোপনের ১০-১৫ দিন পর থেকে এসাটাপ ৭৫ (এসপি) ও কুমুলাস ডিএফ এক সঙ্গে ২ গ্রাম করে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।

 

ফুল তোলা  

পূর্ন বিকশিত জারবেরা ফুলের বাহিরের দু’সারি ডিস্ক ফ্লোরেট পুষ্প দন্ডের সাথে সমকৌনিক অবস্থানে আসলে ফুল তোলা হয়ে থাকে। কর্তনের সময় পুষ্পদন্ড যথাসম্ভব লম্বা রেখে ফুল সংগ্রহ করা হয়। ধারালো চাকু দ্বারা তেরছা ভাবে খুব সকালে বা বিকালে ফুল তোলা উত্তম। ফুল কাটার পর পুষ্পদন্ড এক ইঞ্চি  পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। পানির সাথে অল্প চিনি এবং কয়েক ফোটা লেবুর রস মিশিয়ে দিলে ফুল সতেজ থাকে।

 

জারবেরা ফুলের ফলন  

জাত ভেদে ফলন কম বেশি হয়। তবে প্রতি গাছে ২০-২৫ টি ফুল বছরে সংগ্রহ করা যায়।









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Post Top Ad

Your Ad Spot